ঢাকা শুক্রবার
২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৭ মার্চ ২০২৪

কলেজে শিক্ষকতা থেকে আজ ‘এমএ পাস চা ওয়ালা’!


ডেস্ক রিপোর্ট
172

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২২ | ০৬:১১:২৩ পিএম
কলেজে শিক্ষকতা থেকে আজ ‘এমএ পাস চা ওয়ালা’! ফাইল-ফটো



শিক্ষিত লোক বাড়ছে অথচ কর্মমুখী শিক্ষিত লোক বাড়ছে না। ফলে শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি হচ্ছে। এটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেকার সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। আর যদি মাস্টার্স পাস একজন যুবক চায়ের দোকান দিতে চায় আজকের সমাজে তাহলে সমাজ-পরিবার সবার মাথায় বাঁশ পড়বে। তা-ও আবার দোকানের নাম যদি হয় ‘এমএ পাস চাওয়ালা’! বলছি বর্তমান সমাজের এক শিক্ষিত চা ওয়ালার কথা। যার নাম মোহাঃ শহিদুল ইসলাম। যিনি কাজকে ভালোবাসেন, জীবনে পিছু হাঠতে চান না। পরিশ্রম করে সৎ উপার্জনকে মূলমন্ত্র মেনে তার স্বপ্নের দোকানের বাস্তবায়ন করে ছেড়েছেন। [caption id="attachment_6388" align="alignright" width="684"]ক্যাপিটাল নিউজ ক্যাপিটাল নিউজ[/caption] ‘ছয় মাস ধরে অনেক ভেবেচিন্তে দোকানের এই নাম দিয়েছেন তিনি। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। কষ্ট আছে। প্রধান দুটি কারণের একটি হচ্ছে, নাম দিয়ে আকর্ষণ করে ক্রেতার নজরে আসা। দ্বিতীয়ত, এই নামের কারণে যাতে অন্য শিক্ষিত বেকার যুবকরা অনুপ্রাণিত হন। কেউ যাতে চায়ের দোকানের মতো ব্যবসাকে ছোট করে না দেখেন,’ বলেন রাজধানীর ভাটারা এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম (৩৪)। অক্টোবরের শুরুতে রাজধানীর ভাটারায় কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে ‘এমএ পাস চাওয়ালা’ দোকানের যাত্রা শুরু। এই স্বল্প সময়েই এলাকার চাপ্রেমীসহ স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সাড়া ফেলেছে উদ্যোগটি। এর মধ্যেই চা খেতে আসা কয়েকজন শহীদুলকে বলেছেন, সব সংকোচ ভেঙে তাঁরাও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ীই কিছু একটা করবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তরুণ শহীদুল রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। এরপর ২০১৪ সাল থেকে দুই-তিন বছর চাকরির জন্য চেষ্টা করেও পছন্দমতো কাজ পাননি। পরে ফ্রিজের দোকান দেন। তবে সেখানেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। এরপর উদ্যোগ নেন একটি অনলাইন স্কুলের। স্কুলটি নিয়ে এগোনোর মধ্যেই এক পর্যায়ে ঠিক করেন ‘এমএ পাস চাওয়ালা’ নামে চায়ের দোকান দিয়েই এবার ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করবেন। [caption id="attachment_6389" align="alignright" width="676"]ক্যাপিটাল নিউজ ক্যাপিটাল নিউজ[/caption] শহীদুলের ঠিক করেন সমাজে যারা এ ধরনের কাজকে ছোট করে দেখে, তাদের ভুল ভাঙানোর জন্য চায়ের দোকানই দেবেন। আর নাম দেবেন ‘এমএ পাস চাওয়ালা’। পরিপাটি করে সাজানো শহীদুলের দোকানের ভেতর-বাহির। সেখানে থরে থরে সাজানো তামার তৈরি আরবি কেতার কেটলি। চা তৈরির নানা সরঞ্জাম রাখা বিভিন্ন পাত্রে। স্কুল-কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্রেতারও দেখা মিলল। শহীদুল জানান তাঁর বেশির ভাগ খদ্দের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী। হরেক রকমের চায়ের পাশাপাশি মাংসের স্পেশাল শিঙাড়া খেতে আসেন অনেকে। ইরানি জাফরান চা, ইরানি দুধ চা, ইন্ডিয়ান মালাই চা, স্পেশাল মাসালা চা, স্পেশাল লাভ চা, আমেরিকান চকলেট দুধ চা, টার্কিশ লাল চাসহ মুখরোচক স্পেশাল মাংসের সিঙ্গারা নিয়ে ‘এমএ পাশ চা ওয়ালা’ শুরু করেছেন শহিদুল। ভবিষ্যতে নান্দনিক ও বাহারী নামের আরও চা যুক্ত করতে চান। পাশের এক মুদি দোকানের কর্মী মানিক বলেন, ‘এমএ পাস চাওয়ালা নামটা চোখে পড়ার মতো। আমার মনে হয়, এ নামের কারণে অনেক শিক্ষিত বেকার উৎসাহ পাবে। বসে না থেকে এ ধরনের কাজে নিজেদের যুক্ত করবে। ’ মানিকের মন্তব্য, অনেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ছোটখাটো কাজ করলেও প্রকাশ্যে আসেন না বা সহজে স্বীকার করতে চান না। কিন্তু শহীদুল এটা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাই তিনি অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন।


আরও পড়ুন: