ঢাকা শুক্রবার
০৩ মে ২০২৪
৩০ এপ্রিল ২০২৪

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু কাপাসিয়ায়


ডেস্ক রিপোর্ট
94

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১১:১২:০৪ এএম
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু কাপাসিয়ায় ফাইল-ফটো



গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ খননকাজ শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, কাপাসিয়ার তারাগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে একডালা দুর্গ ছিল। দুর্গটি দৈর্ঘ্যে পাঁচ মাইল ও প্রস্থে দুই মাইলের বেশি ছিল।

 

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সিমিন হোসেন রিমি একটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে এ খনন কাজের উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, “এই কাজটি কাপাসিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজ শেষ হলে এই অঞ্চল আরও বেশি ইতিহাস সমৃদ্ধ হবে। আমরা গর্বিত হব।”

খনন কাজের উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি নিজ খরচে এ খনন কাজ শুরু করেছেন। এই কাজে যুক্ত আছেন তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ এর বেশ কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক।

ইতিহাসের পাতায় গল্প আছে, রানি ভবানী বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর ছিলেন। তাঁর দরদরিয়া দুর্গ ছিল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে, বানার নদের পারে। দুই দশক আগেও সেখানে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ভালোভাবে দৃশ্যমান ছিল। ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান ধ্বংসাবশেষ সব বিলীন হয়ে যায়।
দরদরিয়া দুর্গের ইতিহাসের গল্পগুলো মানুষের মুখে মুখে। তবে সেই ইতিহাসের অস্তিত্ব ছুঁয়ে দেখতে এবার সেখানে শুরু হয়েছে বড় পরিসরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান খননকাজ শুরু করেছেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। সামনে আরও অনেকেই এই কাজে যুক্ত হবেন। 

 

কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে বানার নদের পূর্ব পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রানি ভবানীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। এটি বনিয়া রাজা কর্তৃক নির্মিত হয়েছে। রানি ভবানী ছিলেন বানিয়া রাজার শেষ বংশধর। তার দুর্গের ধ্বংসাবশেষের সবচেয়ে বেশি অবস্থান দরদরিয়া গ্রামের উত্তর অংশে। দুর্গটির বহি:স্থ প্রাচীর মাটি দিয়ে নির্মিত। প্রাচীরের উচ্চতা ১২-১২ ফুট। প্রাচীরের পরিধি প্রায় ২ মাইল এবং এর পরিখা প্রায় ৩০ফুট প্রশস্ত। দুর্গের ৫টি প্রবেশ দ্বার ছিল, তবে ইট বা পাথর নির্মিত প্রবেশ দ্বার বা তোরণের কোন চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি। প্রাচীরটি অর্ধচন্দ্রাকারে নির্মিত। এই প্রাচীরের কিছুটা দূরে আরেকটি প্রতিরক্ষা প্রাচীরের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। এটি ইট নির্মিত প্রাচীর। এ প্রাচীরটিও অর্ধ চন্দ্রাকারে নির্মিত। অনুমান করা হয় এ প্রাচীরে তিনটি প্রবেশ দ্বার ছিল। দুর্গটি ’রানির বাড়ি’ নামে পরিচিত। বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর রানী ভবানী ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম অভিযানের সময় ওই দুর্গে বসবাস করছিলেন। এটিই ঐতিহাসিক একডালা দুর্গ নামে পরিচিত। বাংলার দ্বিতীয় স্বাধীন সুলতান শামস্ উদ্দিন ইলিয়াস শাহ ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলগ কর্তৃক আক্রান্ত হলে একডালা দুর্গে আবস্থান নেন। দিল্লীর সুলতান ফিরোজ শাহ তঘলগ ২২দিন অপেক্ষা করেও বাংলার দ্বিতীয় স্বাধীন সুলতান সামস্ উদ্দিনইলয়াস শাহকে পরাস্ত করতে পারেনি। ইতিহাসে একডালা দুর্গের কথা উল্লেখ থাকলেও আজ পর্যন্ত তা উদ্ধার করা হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর ধরে উঁচু ভূমিতে দৃশ্যমান ধ্বংসাবশেষের ইটগুলো স্থানীয় লোকজন তুলে নিয়ে গেছে। অথচ ইতিহাস সমৃদ্ধ এলাকাটি সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের কাছে। ওই এলাকাটি কাগজপত্রে সংরক্ষিত হলেও এরই মধ্যে সেখানকার জমি যেনতেন ভাবে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা।

 

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা খনন কাজ শুরু করেছি। আপাতত নিজ উদ্যোগে কাজ করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। অর্থ পাওয়া গেলে কাজটি অব্যাহত-ভাবে চলবে।”


আরও পড়ুন: