ঢাকা রবিবার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
২৯ নভেম্বর ২০২৩

ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট: ছয় দিনে ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো


ডেস্ক রিপোর্ট
74

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১১:০৭:০৯ এএম
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট: ছয় দিনে ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ফাইল-ফটো



কোটা সংস্কার অন্দোলন ঘিরে সংহিংসতার মধ্যে গেল বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ছয় দিনে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যবসা হারিয়েছে ট্রাভেল এজেন্টগুলো।

প্রায় ৪ হাজার ট্রাভেল এজেন্টের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ- আটাব বলছে, ট্রাভেল এজেন্টদের প্রতিদিন অন্তত ১০০ কোটি টাকার বাজার রয়েছে।গত ১৮ জুলাই থেকে সব ধরনের ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি, তারিখ পরিবর্তন ও হোটেল বুকিং বন্ধ থাকায় এই বিপুল পরিমাণ ব্যবসা করতে পারেনি।সেই সঙ্গে, ট্রাভেল এজেন্টরা বিভিন্ন করপোরেট ও নিয়মিত গ্রাহকদের কাছ থেকে টিকিট বিক্রির টাকাও আদায় করতে পারেনি। কারণ, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা বন্ধ থাকায় আর্থিক লেনদেন স্থগিত ছিল।ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) বিধি অনুসারে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর পাওনা অর্থও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়।
মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোবাইলে আর্থিক লেনদেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। কোথাও কোথাও ব্যাংকের এটিএম বুথও বন্ধ হয়ে যায়। ইন্টারনেট না থাকায় স্থবির হয়ে পড়ে ই-কমার্স, পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্ধ থাকে বন্দরের কার্যক্রম। ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের সংবাদ সেবাও অচল হয়ে পড়ে। অন্যান্য ব্যবসার মতো ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসাও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে।

সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হতে থাকলে পাঁচ দিন পর গত মঙ্গলবার রাত থেকে ধীরে ধীরে চালু হতে থাকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা।তবে মোবাইল ইন্টারনেট এখনো চালু হয়নি। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ রয়েছে।

গত বুধবার আটাবের সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ  বলেন, “ইন্টারনেট না থাকায় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর পাওনা যেমন আমরা পরিশোধ করতে পারিনি, তেমনি ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকায় আমরাও বিল আদায় করতে পারিনি। প্রতিদিন অন্তত ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা ছিল আমাদের। গেল ছয়দিনে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার বিক্রি নাই হয়ে গেছে।”বিভিন্ন বিদেশি এয়ারলাইনস ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন-আইএটিএ থেকে টিকেট বিক্রির বিপরীতে অর্থ সংগ্রহ করে। এই সংস্থাটি ট্রাভেল এজেন্ট ও বিদেশি এয়ারলাইন্সের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে।

ট্রাভেল এজেন্টরা আই্এটিএর বেঁধে দেয়া সময় অনুসারে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকেট বিক্রির অর্থ পরিশোধ করে। সাধারণত ১৫ দিন অন্তর আইএটিএর মাধ্যমে এই পাওনা পরিশোধ করে ট্রাভেল এজেন্টরা।আব্দুস সালাম আরেফ বলেন, “আইএটিএর পরবর্তী অর্থ প্রদানের তারিখ ৩১ জুলাই। এখনও আমরা পুরোপুরি ইন্টারনেট পাচ্ছি না। আজ ২৪ তারিখ, আমরা যদি ডেডলাইনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে না পারি, তাহলে ডিফল্টার হব এবং দেশে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সেবা ব্যহত হবে।”


আটাব সভাপতি বলেন, “আমরা যদি ক্রেতা ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টিকেট বিক্রির অর্থ আদায় করতে না পারি, তাহলে এয়ারলাইন্সগুলোর বকেয়া টাকাও পরিশোধ করতে পারব না।”তিনি বলেন, “ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমরা গত কয়েকদিনে কোনো এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমরা যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে যোগাযোগ করি, সেটি হচ্ছে জিডিএস সফটওয়্যার। ইন্টারনেট না থাকলে এই সফটওয়্যারে যোগাযোগ করা যায় না। আবার সরাসরি ফোন কলেও বিদেশে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। সব মিলিয়ে আমরা ক্ষতির মুখে পড়লাম।“তবে, আমরা আশাবাদী এখন যদি ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি পাওয়া যায়, তাহলে যে সময় আছে হাতে, হয়ত অর্থ পরিশোধ করতে পারব। আর, পাওনা পরিশোধে আমরা আরও এক সপ্তাহ সময় বাড়ানোর জন্য আইএটিএকে অনুরোধ করব।”


আরও পড়ুন: