ঢাকা বৃহস্পতিবার
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার আলটিমেটামের মুখে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ


ডেস্ক রিপোর্ট
68

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২৪ | ০৯:০৮:২৮ এএম
ছাত্র-জনতার আলটিমেটামের মুখে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ ফাইল-ফটো



শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পাঁচ দিনের মাথায় ছাত্র-জনতার আলটিমেটামের মুখে পদত্যাগ করেছেন তার সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় তুমুল বিক্ষোভের মুখে গতকাল দুপুরে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পরে এক ভিডিও বার্তায় পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। পরে রাতে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির গ্রহণের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের পর আপিল বিভাগের বাকি ছয় বিচারপতির মধ্যে পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন বলে আইন মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। এর পর রাতে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

এর আগে গতকাল সকাল থেকে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট এলাকা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা নানা ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে বেলা ২টার দিকে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার খবরের পর শান্ত হয় সুপ্রিম কোর্ট এলাকা।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের এক কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘প্রধান বিাচরপতি ওবায়দুল হাসান তার পদত্যাগপত্রে বলেছেন- সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং এবং এর রেকর্ড রক্ষা, কোর্ট প্রাঙ্গণ রক্ষা, বিচারপতিদের বাড়িঘর, জাজেজ টাওয়ার রক্ষা, বিচারপতিদের শারীরিক হেনস্তা থেকে রক্ষা করা এবং জেলা জজ কোর্টগুলো ও রেকর্ড রুম রক্ষার স্বার্থে আমাকে এই (পদত্যাগের) সিদ্ধান্ত নিতে হলো।’

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের পর আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে রাতে পাঁচ বিচারপতির পদত্যাগ গৃহীত হওয়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এই পাঁচ বিচারপতি হলেন- বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন। পদত্যাগ করা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্যে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন তার পদত্যাগপত্রে বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে পদত্যাগ করার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি ঢাকার বাইরে অবস্থান করছি। তবে যেহেতু চাচ্ছে তাই এখান থেকেই নিজ হাতে লেখা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। এদিকে রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম পদত্যাগপত্র জমা দেননি বলে জানা গেছে।

এর আগে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুল কোর্ট সভা ডেকেছিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে এই ফুল কোর্ট সভা আহ্বান করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে সবাইকে সুপ্রিম কোর্টে মার্চ করতে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

পরে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টার পর ছাত্ররা সুপ্রিম কোর্টের ভিতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। এই আন্দোলনে যোগ দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবীরাও আন্দোলনে যুক্ত হন।


আরও পড়ুন: