ঢাকা মঙ্গলবার
২২ অক্টোবর ২০২৪
১০ অক্টোবর ২০২৪

চাপ বাড়ছে যুদ্ধবিরতির,বাইডেনের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চায় হামাস


ডেস্ক রিপোর্ট
60

প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২৪ | ১০:০৮:০২ এএম
চাপ বাড়ছে যুদ্ধবিরতির,বাইডেনের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চায় হামাস ফাইল-ফটো



গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সোমবার বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি ‘আর দেরি না করে’ ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের জন্য যৌথ আবেদন জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি মধ্যস্থতাকারীদের আরো আলোচনার পরিবর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উপস্থাপিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানোর এক দিন পর এই আহ্বান এলো। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার পরিকল্পিত আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে ইসরায়েল।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুদ্ধ এখনই শেষ হওয়া উচিত। হামাসের হাতে আটক সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। গাজার জনগণের মাঝে জরুরি ও নিরবচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ সরবরাহ ও বিতরণ প্রয়োজন। আর দেরি করা যাবে না।’আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েল ও হামাসকে একটি বহুলপ্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির দিকে আবার আলোচনা শুরুর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কারণ গাজায় যুদ্ধ ও ইরান সমর্থিত সশস্ত্র নেতাদের হত্যার পর ব্যাপক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ ছাড়া শনিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি স্কুলের আবাসনে ৯৩ জন নিহত হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ বেড়েছে। গাজার কর্মকর্তারা সোমবার বলেছেন, তারা হামলায় নিহত ৭৫ ফিলিস্তিনির লাশ শনাক্ত করেছেনঅন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যম ওয়ালা জানিয়েছে, হামলায় ৩৮ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করার অনুরোধের জবাব দেয়নি।এর আগে হামাস রবিবার জানায়, তারা নতুন কোনো আলোচনা বা প্রস্তাবের মাধ্যমে না গিয়ে, ৩১ মে বাইডেনের দেওয়া ও পরবর্তীতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চায়। বাইডেন পরিকল্পনাটি উন্মোচন করে এটিকে একটি তিন পর্যায়ের ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও সব জিম্মি মুক্তির রূপরেখা’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি এটিকে ইসরায়েলি প্রস্তাব বলে বর্ণনা করেছিলেন।

তবে মধ্যস্থতাকারীরা তখন থেকে কোনো চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়েছে।বাইডেন বলেছিলেন, প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে একটি ‘সম্পূর্ণ ও পূর্ণ যুদ্ধবিরতি’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হবে, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী ‘গাজার সব জনবহুল এলাকা’ সেনা থেকে প্রত্যাহার করবে এবং কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে ইসরায়েলের হাতে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে জীবিত থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, যখন যুদ্ধরত পক্ষগুলো ‘শত্রুতা স্থায়ীভাবে শেষ করার’ জন্য আলোচনা করবে। এরপর ‘গাজার জন্য প্রধান পুনর্গঠন পরিকল্পনা’ করা হবে এবং মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ ফেরত দেওয়া হবে।

এদিকে হামাস মঙ্গলবার গোষ্ঠীটির গাজাপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে নতুন নেতা হিসেবে মনোনীত করেছে। তিনি নিহত রাজনৈতিক নেতা ও যুদ্ধবিরতির আলোচক ইসমাইল হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি ৩১ জুলাই তেহরানে এক হামলায় নিহত হন। সেই হামলার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যদিও ইসরায়েল এর দায় স্বীকার করেনি। একই সময় ইসরায়েল বৈরুতে এক হামলায় লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সামরিক প্রধানকে হত্যা করে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ এড়াতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা তীব্র হয়ে ওঠে।

গাজা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর। ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেই হামলায় এক হাজার ১৯৫ জন নিহত হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। সেই সঙ্গে যোদ্ধারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় যাদের মধ্যে ১১১ জন এখনো গাজায় রয়েছে। তবে ৩৯ জন জিম্মি মারা গেছে বলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে অন্তত ৩৯ হাজার ৮৯৭ জন নিহত হয়েছে বলে ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত ৪৮ ঘণ্টায় ১০৭ জন মারা গেছে।

এ ছাড়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ বলেছে, গত কয়েক দিনে ৭৫ হাজারেরও বেশি মানুষ দক্ষিণ-পশ্চিম গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যেখানে খান ইউনিস অবস্থিত। পুরো গাজা উপত্যকার জনসংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ।

সূত্র : এএফপি


আরও পড়ুন: