ঢাকা শনিবার
২৭ এপ্রিল ২০২৪
২৩ এপ্রিল ২০২৪

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস


ডেস্ক রিপোর্ট
73

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৪ | ১০:০৩:৪৬ এএম
আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস ফাইল-ফটো



আজ ইতিহাসের নৃশংসতম ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস।মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। ১৯৭১ সালের এইদিন মধ্যরাতে ভয়ঙ্কর, নৃশংস ও বিভীষিকাময় কালরাত এসেছিলো বাঙালীর জীবনে। 

এ রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতা গণহত্যায়, যা কালরাত হিসেবে পরিচিত। 
যে গণহত্যার নৃশংসতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেখেনি বিশ্ব।সেই রক্তাক্ত ভয়াল রাত সেদিন আকাশকেও কাঁদিয়েছিলো। একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকান্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলতঃ বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কলংকজনক গণহত্যার সূচনা মাত্র। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যার দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গোপনে সামরিক প্রস্তুতি নিতে থাকে। মুক্তিকামী বাঙালি তখন স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত। আলোচনার নামে শাসকগোষ্ঠীর সময়ক্ষেপণকে বাঙালিরা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।

ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমের। ঘরে ঘরে অনেকে তখন ঘুমিয়েও পড়েছে। গভীর হতে শুরু করেছে রাত। অকস্মাৎ যেন খুলে গেল নরকের সব দরজা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’। জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক নামল ঢাকার রাস্তায়। রাতের স্তব্ধতা গুঁড়িয়ে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিন গান ও মর্টার। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারি হলো রাতের বাতাস। মানব ইতিহাসের পাতায় রচিত হলো কালিমালিপ্ত আরেকটি অধ্যায়। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হলো বিশ্ব বিবেক। এ রাতেই বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করেছিল বিশ্ববাসী। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে এক রাতেই হানাদাররা হত্যা করেছিল হাজার হাজার ঘুমন্ত বাঙালীকে। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন- “সে রাতে সাত হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হয় আরও তিন হাজার লোককে। পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো।
সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।” ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাঙালী কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে। শহরের রাজপথ, অলিগলি, ফুটপাথ, খেলার মাঠ, ক্যাম্পাস সর্বত্রই মৃত্যু রেখে গেছে তার করাল স্বাক্ষর। মানুষের কান্নায় ভারী হয়ে এলো শহরের আকাশ। সে কান্না ছাপিয়ে তখন আকাশে কেবলই মুহুর্মুহু আগুনের লেলিহান শিখা। মধ্যরাতে ঢাকা হয়ে উঠল লাশের শহর। বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে নিষ্ঠুর, নির্মম ও বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানী বাহিনী । একাত্তরের এ দিনে ঘুমন্ত শিশু, বধূ, বৃদ্ধার রক্তে কলঙ্কিত হলো মানব ইতিহাস। সেই নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা চেঙ্গিস খান-হালাকু খানদের নৃশংস নির্মমতাকেও হার মানায়। নয় মাসে স্বাধীনতার জন্য মূল্য দিতে হয়েছিল ৩০ লাখ মানুষকে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তাদের এদেশীয় দোসর ঘাতক-দালাল, রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনীর সদস্যরা। স্বাধীনতার জন্য সম্ভ্রম হারাতে হয়েছিল অসংখ্য মা-বোনকে। মাত্র নয় মাসে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যা ও নারী নিগ্রহের নজির বিশ্ব ইতিহাসে আর নেই। শুধু নিষ্ঠুর ও বীভৎস হত্যাই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা গণমাধ্যমও সেদিন রেহাই পায়নি ইয়াহিয়ার পরিকল্পনা থেকে।
ওইদিন জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বললেন, ‘মুজিব দেশের অখন্ডতা ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত হেনেছেন। এ অপরাধের জন্য তাঁকে শাস্তি পেতেই হবে। দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য আজ আমি দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ 


কর্মসূচিঃ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। ঐ দিন থেকেই দিনটি গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। পাকিস্তানি বাহিনীর যে নির্মমতার শিকার হয়েছিল বাংলার মানুষ, এক মিনিটের জন্য বাতি নিভিয়ে সেই কালরাত স্মরণ করবে বাংলাদেশ। সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, আজ সোমবার রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক-আউট’ পালন করা হবে। এ সময় সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনো আলোকসজ্জা করা যাবে না। কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাকআউটের আওতামুক্ত থাকবে।  

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণীতে গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে সব ধরনের বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


আরও পড়ুন: