ঢাকা রবিবার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

খাদ্যে মূল্যস্ফীতি আবারো বেড়েছে


ডেস্ক রিপোর্ট
108

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৪ | ০৯:০৫:৪৮ এএম
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি আবারো বেড়েছে ফাইল-ফটো



একমাসের ব্যবধানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। সবশেষ গত এপ্রিল মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে উঠেছে। এর আগের মাস মার্চে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতির হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। তার সঙ্গে চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্য-বহির্ভূত খাতেও খরচ বেড়েছে।

সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ বেশি চাপে আছে। একইসঙ্গে যে হারে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে সেভাবে মানুষের আয় বাড়েনি। গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২, যেখানে শহরাঞ্চলের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪৬। গ্রাম ও শহর দুই অঞ্চলেই খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আবার দুই অঙ্ক ছাড়িয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে; গত মাসে এ খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর আগে মার্চ মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এদিকে, গত এপ্রিল মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে; আগের মাস মার্চে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।

বিবিএস প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এপ্রিলে শহরে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, অথচ গ্রামে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। গ্রামে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং খাদ্য-বহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে, শহরে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শহরে খাদ্য খাতে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং খাদ্য-বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৯ দশমিক ০১ শতাংশ।

শহরের তুলনায় গ্রামে সব খাতেই মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। বিবিএস বলছে, যেখানে এপ্রিল মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সেখানে মজুরি সূচক বেড়ে মাত্র ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ হয়েছে। তার মানে সংসারের খরচ মেটাতে ধারদেনা করতে হচ্ছে। কৃষিতে ৮ দশমিক ২৫, শিল্প খাতে ৭ দশমিক ৩৬ ও সেবা খাতে মজুরি সূচক ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। কোনো খাতেই ৯ শতাংশের ওপরে মজুরি নেই, অথচ সাধারণ মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি।

সূত্র মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি ঘটে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্যহ্রাসের কারণে অনেক দেশে পর্যায়ক্রমে নেমে আসে।

সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি উল্টো আরও বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশে নেওয়া হয়। যদিও বিবিএসের হিসাবে এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এদিকে সরকারের ‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ বৈঠকে আগামী তিন অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রার অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি আগামী বাজেটে ঘোষণা দেওয়া হবে। এর বাইরে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৬ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরের ক্ষেত্রে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলা হচ্ছে।

কিন্তু যা করলে সেটি কমবে, সেভাবে নীতি গ্রহণ করলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে। ফিসক্যাল পলিসিতে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কী পরিবর্তন হবে, বাজেট ঘাটতি কমানোর কী উদ্যোগ থাকছে সেটি বলতে হবে। এ ছাড়া টাকা ছাপিয়ে অর্থায়ন এবং ঘাটতি বাজেট পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ বন্ড ইস্যু করে টাকা না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।

এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসলে বুঝতে সুবিধা হবে যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে সেদিকে যাবে কি না। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দেখতে হবে সরকারের সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা রূপরেখার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না। আমাদের মূল্যস্ফীতি নির্ভর করে আংশিক আন্তর্জাতিক মূল্য ও আংশিক অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর।

গত দুই বছরে বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য বেড়েছে, ওই সময় দেশেও বেড়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক কমলেও আমাদের মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলছে। ফলে বিশ্ববাজারে দাম কমলেই দেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যস্ফীতি কমবে সেটি ধরে নেওয়া যায় না। এখন কতটা পণ্য আমদানি করতে পারছি, ডলারের মজুত কেমন, ঘাটতি বাজেটের জন্য কতটা টাকা ছাপানো হচ্ছে, মুদ্রানীতি সংকোচন না সম্প্রসারণ দেওয়া হচ্ছে, রাজস্বনীতি এসবের ওপর নির্ভর করছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।


আরও পড়ুন: