ঢাকা শুক্রবার
১৮ অক্টোবর ২০২৪
০৭ অক্টোবর ২০২৪

নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন,খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ


ডেস্ক রিপোর্ট
36

প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৪ | ১০:১০:২৩ এএম
নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন,খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ ফাইল-ফটো



আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ছিল অত্যন্ত চড়া। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পণ্যের দাম আরও বেড়েছে।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম কমাতে যতটা জোর দেওয়া দরকার ছিল,শুরু থেকে ঠিক ততটা গুরুত্ব দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। ইতিমধ্যে দাম অনেকটা বেড়ে হয়েছে আকাশ্চুম্বী। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। আর এই লাগামহীন বাজারের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। 

অন্তর্বর্তী সরকার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাস পর এখন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিছু পণ্যের শুল্ক–কর কমানো হয়েছে। কিছু পণ্যের শুল্ক–কর কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজারে অভিযান বাড়ানো হয়েছে। জেলায় জেলায় গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স।যদিও এর আগেই ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানি কমে গেছে। এতে দাম বেড়েছে। ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম লাগামছাড়া। চাল ও আটার দাম বাড়তি। সবজির বাজারে যেন আগুন লেগেছে। সব মিলিয়ে কষ্টে আছে মানুষ।

গত কয়েক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দামে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রায় প্রতিটি পণ্য।অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর যতটা না দাম কমেছে, তার চেয়ে বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং
করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবির) তথ্যেও এর প্রমাণ মিলেছে।

টিসিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে মোটা চালের দাম ১.৮৭ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি ১২.১২ শতাংশ, ফার্মের ডিম ৫.৭১ শতাংশ ও মুগ ডাল ৯.৬৮ শতাংশ বেড়েছে। বাড়তি অন্যান্য পণ্যের দামের হারও।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মাছ-মাংস, ডাল-চাল, মসলা ও সবজি মিলিয়ে একদিনের বাজারের খরচ হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতি কেজি মোটা চাল কিনতে ৫০-৫৪ টাকা, পাঙাশ বা তেলাপিয়া ২৪০-২৯০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১১৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২৪০ টাকা, মরিচ (৫০০ গ্রাম) ১৫০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১০৫-১১০ টাকা ও তেল (খোলা) ১৬০ টাকা। এতেই যে কোনো পরিবারের বাজার খরচ দাঁড়ায় হাজার টাকার বেশি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতি বন্যা-বৃষ্টি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার জানান, সম্প্রতি বন্যায় ও টানা বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বাজারে কমেছে সরবরাহ। তাছাড়া শীতকালীন আগাম সবজি মাত্র বাজারে উঠতে শুরু করেছে যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তাই দামও তুলনামূলক বাড়তি।রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে ইলিশ রপ্তানি ও ধরা বন্ধের খবরে বাড়ছে দাম। ইলিশের প্রভাবে বেড়েছে অন্যান্য মাছের দামও। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় অসংখ্য মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমার প্রভাব তো রয়েছেই।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে সিন্ডিকেট করে ডিম-মুরগির দাম বাড়ানো হয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সরকার সব সময় করপোরেটদের সঙ্গে নিয়ে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণের আলোচনা করেন, এখানে প্রান্তিক খামারিদেরও মতামত নিতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানির ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে মুরগি ও ডিমের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। বাজারেও দাম কমে যাবে। প্রান্তিক খামারিরাও ন্যায্য মূল্য পাবে, ভোক্তারাও ন্যায্যমূল্যে ডিম-মুরগি কিনতে পারবেন।

অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাঁধা আয়ের নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের। বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে।কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। এটি গত সরকারের সময় থেকেই বাড়তি। সরকার পতনের পর মাঝে এক সপ্তাহ দাম কমলেও এখন আবার সেটি চড়া। কারণ সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা পোশাক বদলেছে, কিন্তু চরিত্র বদলায়নি। তারা আগের মতোই কারসাজি করে যাচ্ছেন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ব্যাগভর্তি বাজার করা কষ্টসাধ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে ৫০০ টাকায়ও ব্যাগভর্তি বাজার করা যেত। বর্তমানে বাড়তে বাড়তে সেটি হাজার টাকার বেশি ছাড়িয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই হাজার টাকায়ও ব্যাগ ভর্তি বাজার করা সম্ভব হয় না।বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে জোরালোভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাব সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে। কিন্তু বাজারে এখনো বেশিরভাগ খাদ্যপণ্যের দাম চড়া।


আরও পড়ুন: