ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ নভেম্বর ২০২৪
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রান্নার জন্য স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর তেল


ডেস্ক রিপোর্ট
167

প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০২৪ | ০৩:০৩:৩১ পিএম
রান্নার জন্য স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর তেল ফাইল-ফটো



রান্নার সব উপাদানই শরীরে প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে তেলও আছে। আর কয়েকটি তেল বেশি উপকারী। ক্যালরির পার্থক্য ছাড়াও রান্নার তেলে রয়েছে ভিন্ন পুষ্টিগুণ, বিশেষত চর্বির যৌগ। এই বিষয়ে মার্কিন পুষ্টিবিদ মেলিসা রিফকিন ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “কিছু তেলে ‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’য়ের মাত্রা বেশি, কিছু তেলে আবার ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ বেশি। এমনকি ‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’য়ের মধ্যে বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। যেমন- মনোআনস্যাচুরেইটেড এবং পলিআনস্যাচুরেইটেড।” তাই স্বাস্থ্যকর রান্না করতে কোন তেল বেশি ভালো সেটার একটা ধারণা থাকার প্রয়োজন রয়েছে।

যেসব তেল স্বাস্থ্যকর

অলিভ অয়েল
রান্নায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ। তাছাড়া ঠাণ্ডা বা গরম খাবার তৈরি এমনকি বেইক করা খাবারেও এই তেল ব্যবহার করা যায়। এতে আছে অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেইটেড চর্বি এবং ভিটামিন ই।
এই তেলে রয়েছে ‘অলিয়েক অ্যাসিড’ নামক আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট।। এই মনোআনস্যাচুরেইটেড চর্বি ইনসুলিন প্রতিরোধের বিরুদ্ধে এবং প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।
“আরও রয়েছে ভিটামিন ই, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং অনেক রোগ ও অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে”- বলেন রিফকিন।
অলিভ অয়েল দিয়ে সালাদের ড্রেসিং তৈরি, মাঝারি তাপে সওতে সবজি তৈরি করা অথবা বেইক করার সময় বাটারের পরিবর্তে ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

সূর্যমুখীর তেল
‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটস’ থাকার কারণে এই তেল স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই ‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটস’য়ে প্রাথমিকভাবে ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। রিফকিন বলেন, “যদিও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে প্রদাহ বৃদ্ধি পায় এবং নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।” অন্যদিকে উচ্চ অলিয়েক সমৃদ্ধ হওয়াতে সূর্যমুখীর তেল ওমেগা-সিক্স গ্রহণের ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা রাখে। এই দুই উপাদানের সমন্বয়ে কারণে প্যান ফ্রাই অথবা সওতে এবং বেইক করা খাবার তৈরিতে বাটারের ভালো বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিলের তেল
তিলের বীজ থেকে এই তেল সংগ্রহ করা হয়। হালকা সুগন্ধ থাকার জন্য এই তেল মধ্যপ্রাচ্য সহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে খুব বেশি ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ম্যারিনেট করার কাজে। তিল তেলের স্মোকিং পয়েন্ট উচ্চমাত্রার তাই ডিপফ্রাই করার জন্য তিল তেল বেশ জনপ্রিয়।
তিলের তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম মাত্রায় এবং মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এছাড়াও এই তেলে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন বি৬ থাকে। হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য এই তেল ভালো।

চিনা বাদামের তেল
বিভিন্ন বাদামের বীজ থেকে সংগ্রহ করা হয় বাদাম তেল। সৌখিন রান্না ছাড়া বাদাম তেল খুব একটা ব্যবহার হয় না। সয়াবিন তেলের বিকল্প হতে পারে বাদামের তেল। বাদাম তেলে প্রচুর ভিটামিন থাকে। বাদাম তেলে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি বেশি থাকে। যা আমাদের রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং শরীরের জন্য উপকারী অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। যা করোনারি হার্ট ডিজিজ, ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোল সাহায্য করে থাকে। হার্ট, ত্বক চুল ছাড়াও বাদাম তেল ডায়াবেটিসের সমস্যায় একটি কার্যকরী সমাধান। এটি রক্তের অতিরিক্ত সুগার লেবেলকে কম করে। ডায়াবেটিস ছাড়াও কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার হাত থেকে বাঁচায়। এই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ওষুধ হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও বেদনা নাশক হিসাবেও কাজ করে বাদাম তেল।

সরিষার তেল
রান্নায় সরিষার তেল আদিম কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। সরিষা গাছের বীজ থেকে এই তেল সংগ্রহ করা হয়। সরিষার তেলের স্মোকিং পয়েন্ট বেশি তাই ডিপ ফ্রাই করতে এই স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করা হয়। সরিষার তেলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পেটে জীবাণুর সংক্রমণ বন্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে সরিষার তেল। দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে এই তেল বেশ শক্ত ভূমিকা রাখে। সরিষার তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট (সম্পৃক্ত চর্বি) খুব কম থাকে ফলে এই তেল হার্টের জন্যে খুব ভালো। সরিষার তেলে প্রচুর পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এই ফ্যাটগুলো হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমায়। সরিষার তেলে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাট থাকে এই ভালো ফ্যাটগুলো মস্তিষ্কে এবং হার্টে শক্তি যোগান দেয়। ভালো গুণের পাশাপাশি সরিষার তেলের একটি খারাপ গুণ আছে তা হলো এই তেলে ৩৫-৪৮% ইউরিক এসিড আছে। ইউরিক এসিড কিডনির জন্যে ক্ষতিকর। আমেরিকা সহ ইউরোপের অনেক দেশে এই তেল ব্যবহার নিষিদ্ধ।

অস্বাস্থ্যকর তেল
রান্নার সময় আমরা নানা ধরনের তেল ব্যবহার করে থাকি। সেগুলো কিছু আছে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী, আবার কিছু আছে তেমন কোনো উপকারেই আসে না। তবে কিছু তেল আছে, যেগুলো অস্বাস্থ্যকর তো বটেই, রান্নায় সেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। সে রকমই কিছু তেল সম্পর্কে আজ আমরা জানব... 

কর্ন অয়েল
কর্ন অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, যা কিনা ক্যান্সার, অ্যাজমা, টাইপ-২ ডায়াবেটিসসহ আরো নানা রোগের প্রধান কারণ। ক্ষতিকারক তেলের মাঝে এটির নাম এ জন্য সবার প্রথমে আসে। যদিও কর্ন অয়েলের কিছু ভালো দিকও রয়েছে, কিন্তু খারাপ দিকের জন্য এটি কম খাওয়াই ভালো। 

সয়াবিন তেল 
আমাদের অতিপরিচিত এই সয়াবিন তেল নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ওমেগা-৬। এই উপাদান বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার ফলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়ে। আবার ক্যান্সার, প্রদাহ এসবের জন্যও দায়ী করা হয় এই উপাদানকে। তাই সয়াবিন তেল ব্যবহার নিয়ে আরো একবার চিন্তা করা প্রয়োজন।

রাইস ব্র্যান অয়েল 
রাইস ব্র্যান অয়েল সাধারণত এর স্মোকি ফ্লেভার এবং এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই-এর জন্য প্রশংসিত হয়। তবে যদি অধিক পরিমাণে এই তেল খাওয়া হয় তাহলে শরীরের ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬-এর মধ্যকার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এই তেল। যার ফলে দেখা দিতে পারে নানা রকম স্বাস্থ্য জটিলতা।
 
পাম অয়েল
পাম অয়েলের ব্যবহার সবখানেই অনেক বেশি। সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায় বলে সবাই কমবেশি রান্নায় এই তেল ব্যবহার করে থাকে। এতে বিদ্যমান উচ্চ মাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে অতিরিক্ত এই তেল খাওয়া হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।


আরও পড়ুন: