ঢাকা শনিবার
২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৭ মার্চ ২০২৪

দেশে দেশে বাহারি ইফতারি


ডেস্ক রিপোর্ট
70

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৪ | ১১:০৩:০২ এএম
দেশে দেশে বাহারি ইফতারি ফাইল-ফটো



শুরু হয়ে গেছে রমজান মাস। প্রতি বছর রোজা শুরু হয় নতুন উদ্যমে। রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারের সময়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ইফতারও একটা উৎসব। নানা ধরণের উপাদেয় উপকরণ দিয়ে ইফতার সাজাতে ও খেতে পছন্দ করে।
মুসলমানগণ মনে করেন ইফতারের মাধ্যমেই একজন রোজাদার তার রোজা সম্পন্ন করে ও আল্লাহ তা’আলার কাছে আসতে পারে কারণ এ সময় আল্লাহ তা’আলা রোজাদারদের দোয়া কবুল করেন।
প্রিয় নবী (সা.) খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করতেন। সময়ের পরিবর্তনে তাতে যোগ হয়েছে নানা পদের হরেক রকম খাবার। 

 

মানুষের খাদ্যাভ্যাস মূলত নির্ভর করে ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু ও পরিবেশের ওপর। সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতিও তাতে বড় ভূমিকা রাখে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের এক সুতোয় গেঁথেছে ইসলাম। এর পরও দেশে দেশে খাদ্যাভ্যাসের ভিন্নতা দেখা যায় ইফতারে।

বাংলাদেশ : বাংলাদেশে খেজুর, পেঁয়াজু, বেগুনি, হালিম, আলুর চপ, জিলাপি, মুড়ি ও ছোলা দিয়ে ইফতার করে থাওেক মানুষ। একটু ব্যতিক্রমী হলে মাংসের কিমা ও মসলা দিয়ে তৈরি কাবাবের সঙ্গে পরোটা, মিষ্টি ও ফল। শরবতসহ এসব খাবার এ দেশের ইফতার টেবিলকে দেয় পরিপূর্ণ রূপ।

পাকিস্তান: পাকিস্তানিরা ইফতারে বেশ ভারি খাবার খেয়ে থাকেন। এর মধ্যে ভাজাপোড়ার পরিমাণও অনেক। সমুচা, তেলে ভাজা পাকোড়া, নিমকিজাতীয় নামাক পাড়া, ছোলা চাট, বিভিন্ন ধরনের কাবাব, দাহি ভাল্লা ইত্যাদি খাবার পাকিস্তানি ইফতারে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও পানীয় হিসেবে রুহ আফজার কদর এ দেশে সবচেয়ে বেশি। অনেকে অবশ্য স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারও পছন্দ করেন।

ভারত: ভারতের ইফতারিতে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। সেখানকার একেক রাজ্যে ইফতারির একেক রকম পদ হয়। হায়দরাবাদের লোকজনের ইফতার হয় হালিম দিয়ে। তামিলনাড়ু ও কেরালায় ইফতার হয় ননবো কাঞ্জি দিয়ে। এটি তৈরি হয় ভাত, খাসির মাংস, সবজি ও মসলা দিয়ে। পাশাপাশি থাকে বন্ডা, পাকুড়া এসব খাবার।

সৌদি আরব: সৌদি আরবে প্রতিদিন লাখো মুসলিম একসঙ্গে বসে ইফতার করেন। ইফতারের তালিকায় থাকে বহু মুখরোচক খাবার। নানা ধরনের হালুয়া আরবের ইফতারে অন্যতম প্রধান বিষয়। এছাড়াও থাকে ২ ধরনের রুটি। বড় রুটিটিকে বলা হয় তমিজ, অপেক্ষাকৃত ছোট ও ভারি রুটির নাম খবুজ। থাকে সাম্বুচা নামের একটি খাবারও। যার সঙ্গে নাম ও ধরনের মিল রয়েছে আমাদের অতি পরিচিত সমুচার। এই সমুচায় মরিচ ছাড়াই মাংসের কিমা ভর্তি থাকে। ঝাল-মিষ্টির সঙ্গে স্বাস্থ্যের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সালাতা নামের সালাদটিও আরব দেশের ইফতারে অন্য মাত্রা যোগ করে। তাছাড়া পানীয় হিসেবে সরবা বা শরবত আর দুগ্ধজাত লাবান তো থাকেই।

ইরান: ইরানিরা ঐতিহ্যগতভাবে ইফতারে খেজুর সঙ্গে এক কাপ চা অথবা গরম পানি পান করেন। চা, রুটি, পনির, সতেজ শাক-সবজি খান তারা। এছাড়া মিষ্টির তালিকায় থাকে জুলবিয়া ও বামিহ নামের ২টি ঐতিহ্যবাহী পার্সিয়ান মিষ্টি। চিনির শিরাতে ডোবানো থাকে এই মিষ্টিগুলো। ইরানে তৈরি করা এক বিশেষ ধরনের স্যুপও ইফতারের সময় বেশ প্রচলিত। 

মিশর: উষ্ণ আবহাওয়ার অঞ্চল হবার কারণে মিশরে ইফতারে শীতল পানীয় ও সতেজ ফলমূলের বিশেষ কদর রয়েছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের কুনাফা নামের মিষ্টিজাতীয় খাবারটি মিশরে ইফতার হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই খাবারটি চাইলে খুব সহজে লাচ্ছা সেমাই দিয়ে তৈরি করা যায়। বেশিরভাগ ঘরে রোজা ভাঙা হয় বাদামি রুটির সঙ্গে ফুল মেডামেস বা ফাভা বিনের তৈরি একটি তরকারি দিয়ে। পানীয়র জন্য অ্যাপ্রিকট বা খুবানির খোসা ব্যবহার করা হয়। ইফতারের কিছুক্ষণ আগে শরবত তৈরি করা হয়। শরবতটির বিশেষ নাম হচ্ছে কামার আল-দ্বীন, যার অর্থ ধর্মের চাঁদ।

সোমালিয়া: সোমালিয়াতে ইফতারে তালিকার শীর্ষে থাকে উটের মাংস। উটের মাংস ও দুধ অত্যন্ত সমৃদ্ধ বলে বিশ্বাস সোমালিয়াবাসীদের। যাযাবর জীবনযাত্রায় ওটকা নামক একটি খাদ্যদ্রব্য তাদের বেশ পছন্দ। যেটিকে উটের মাংসের শুঁটকি বললে ভুল হবে না। ইফতারেও এই খাদ্যটি এই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ প্রচলিত।

আফগানিস্তান: আফগানিস্তানে ইফতার তালিকায় থাকে একধরনের বিশেষ স্যুপ বা সুরওয়া, ভেড়ার মাংসের দোপেঁয়াজা, কোরমা-এ-মুরগ বা মুরগির কোর্মা, কোর্মা-এ-গোশফান্দ বা খাসির কোরমা, বিভিন্ন ধরনের পাকোড়া, মিষ্টি হিসেবে শিরনি বা খোরমা ইত্যাদি খাবার। মান্টু নামে আরেকটি বিশেষ পদ থাকে।

ইন্দোনেশিয়া: ইফতারকে বুকা পুয়াসা বলা হয়। এখানে বেদুক বাজানোর মাধ্যমে ইফতারের সময় নিশ্চিত করার রেওয়াজ রয়েছে।

মালয়েশিয়া: স্থানীয় লোকেরা ইফতারে আখের রস ও সয়াবিন মিল্ক খান, যাকে তাদের ভাষায় বারবুকা পুয়াসা বলা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় খাবারের মধ্যে থাকে লেমাক লাঞ্জা, আয়াম পেরিক, নাসি আয়াম, পপিয়া বানাস ও অন্যান্য খাবার।

মালদ্বীপ: এখানে ইফতার ‘রোয়াদা ভিলান’ নামে পরিচিত। তাদের ইফতারের মূল উপাদান শুকনো বা ফ্রেশ খেজুর। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ বা হোটেলে ইফতার ও ডিনারের বিশেষ আয়োজন থাকে।

রাশিয়া: ইফতার আয়োজনে খেজুর ও অন্য ফল রাখা হয়। এরপর স্যুপ, রুটি ও বিভিন্ন স্থানীয় খাবারের আয়োজন তো রয়েছেই। রাশিয়ান ঐতিহ্যবাহী কাভাসকেও তৃষ্ণা মেটাতে সেরা পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

দুবাই: নানা রকম মুখরোচক খাবার দিয়ে দুবাইয়ে ইফতার করা হয়। রুটি, মাংসের চপ, মসুর ডালের স্যুপ, সালাদ ও চা ইত্যাদি থাকে। তাদের এই আয়োজনকে সম্মিলিতভাবে ‘মেজে’ বলা হয়।

সিরিয়া: আরব দেশগুলোর মধ্যে ভালো হালুয়া তৈরি করে সিরিয়ার লোকেরা। তাদের হালুয়া যে কত নকশার হতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এ ছাড়া তারা ইফতারের পর দিজাজ সয়াইয়া, খবুজ, সরবা ও চা খায়।


আরও পড়ুন: