ঢাকা শনিবার
০৪ মে ২০২৪
১৭ মার্চ ২০২৪

হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয়


ডেস্ক রিপোর্ট
34

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১১:০৪:১৬ এএম
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় ফাইল-ফটো



গরম বেড়ে চলছে। গরমের উৎপাতে দিশাহারা অবস্থা।বাইরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শরীর চেষ্টা করে দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে। এ জন্য গরম বাড়লে শরীরও ঘামতে শুরু করে। ঘাম বাষ্পীভূত হলে শরীর ঠাণ্ডা হয়। কিন্তু শরীরে ঘামার মতো যথেষ্ট পানি না থাকলে ডি-হাইড্রেশন হয়ে অসুস্থতা দেখা দেয়।পরিবেশের আর্দ্রতা বাড়লে দেহ গরম হতে থাকে, দেহ গরম হলে এক পর্যায়ে হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। বিশেষ করে যাদের বাধ্য হয়ে প্রচণ্ড গরমে খোলা মাঠে চলাফেরা বা কায়িক পরিশ্রম করতে হয়। গরম একা আসে না, সঙ্গে নিয়ে আসে এমন কিছু সমস্যা যা বাস্তবিকই ভয়ের বিষয়। গরমের অনেক বিপদের মাঝে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার নাম ‘হিটস্ট্রোক’।
 
হিটস্ট্রোক কীঃ অতিরিক্ত গরমের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিটস্ট্রোক। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিটস্ট্রোক বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। এমনকি ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমে যায়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান বা পরিশ্রম করলে, তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়, শরীরের ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে ‘হিটস্ট্রোক’ দেখা দেয়।

হিটস্ট্রোকের লক্ষণঃ শরীরে নির্ধারিত তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে তা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। আকাশে যখন গনগনে রোদ তখন তার প্রভাব মানুষের শরীরেও পড়ে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হাঁসফাঁস, দম বন্ধ অবস্থা বা শরীর আনচান করছে-এটাই প্রথম বিপদের লক্ষণ। প্রাথমিকভাবে হিটস্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সহসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা পায়। এর পরের ধাপে হিট এক্সহসশনে দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর অত্যন্ত ঘামতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভয়াবহ ‘হিটস্ট্রোক’ হতে পারে। এর লক্ষণগুলো হলো-

* প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়।
* শরীরে অনেক গরম অনুভূত হয়, কিন্তু ঘাম বন্ধ হয়ে যায়। শরীরে হাত দিলে মনে হয় আগুন বের হচ্ছে।
* সারা শরীরের ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়।
* নিঃশ্বাস দ্রুত হয়, বুক ধড়ফড় করে। নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়। রক্তচাপ অনেক কমে যায়।
* সারা শরীরে খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্ন কথাবার্তা, ছটফট করা ইত্যাদি হতে পারে।
* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে পানির মাত্রা কমে কিডনি ফেলিওরও হতে পারে, বিশেষ করে বয়স্কদের।
* রোগী শকেও চলে যায়।

প্রতিরোধের উপায়ঃ অতিরিক্ত গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিটস্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। এগুলো হলো-

* হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। কাপড় সাদা বা হালকা রঙের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে ভালো।
* যথাসম্ভব ঘরের ভিতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না।
* বাইরে যেতে হলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন।
* বাইরে যারা কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তারা মাথায় ছাতা বা মাথা ঢাকার জন্য কাপড়জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণের জন্য ছায়ায় যাবেন।
* প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করুন। মনে রাখবেন, গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে খাওয়াই ভালো। সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয় যেমন-খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদিও পান করতে হবে। পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে।
* সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত, গুরুপাক জাতীয় খাদ্য পরিহার করুন।
* যাদের শরীরে কোনও অসুখ আছে বা সারা দিনে প্রচুর ওষুধ খেতে হয়, তাদের দিনের চড়া রোদে না বেরোনোই ভালো।
* হার্টের অসুখ থাকলে চড়া রোদে পানির মাত্রা কমে গিয়ে রক্ত ঘন হতে থাকে, ডিহাইড্রেশন ও রক্তচাপ কমে গিয়ে ব্রেনের ক্ষতি হতে পারে।

আক্রান্ত হলে কী করণীয়ঃ প্রাথমিকভাবে হিটস্ট্রোকের আগে যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই যা করতে পারেন তা হলো-

* দ্রুত কোনো শীতল স্থান বা ছায়ায় চলে যান। যদি সম্ভব হয়, ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিন। এগুলো না থাকলে অন্তত হাত পাখা ব্যবহার           করে শরীরে বাতাস লাগান।
* ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে গোসল করুন।
* প্রচুর পানি, শরবত পান করুন। চা বা কফি পান করবেন না। কিন্তু যদি হিটস্ট্রোক হয়েই যায়, তবে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে    নিতে হবে, ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে রোগীর আশপাশে যারা থাকবেন তাদের করণীয় হলো-দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। হাসপাতালে পৌঁছার আগ পর্যন্ত যা করতে হবে-
* রোগীকে দ্রুত ছায়ায় নিয়ে যান।
* গায়ের কাপড় খুলে দিন।
* শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বাতাস করুন।
* সম্ভব হলে কাঁধে, বগলে বরফ দিন।
* রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে খাবারস্যালাইন, পানি বা শরবত পান করতে দিন।


আরও পড়ুন: