ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ নভেম্বর ২০২৪
৩১ অক্টোবর ২০২৪

ফ্রান্সে ক্ষমতায় যাওয়া হচ্ছে না উগ্র ডানপন্থীদের, ম্যাক্রোঁর কৌশলেই বাজিমাত


ডেস্ক রিপোর্ট
145

প্রকাশিত: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ১০:০৭:০৮ এএম
ফ্রান্সে ক্ষমতায় যাওয়া হচ্ছে না উগ্র ডানপন্থীদের, ম্যাক্রোঁর কৌশলেই বাজিমাত ফাইল-ফটো



রবিবার ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে না পারলেও বাজিমাত করল দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কৌশল। নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‌্যালির (আরএন) জয় আটকানোর প্রচেষ্টায় তার কৌশল সফল হয়েছে বলেই বুথফেরত জরিপে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ন্যাশনাল র‌্যালির নেতা মারিন লা পেন নিজের দলের পরাজয় স্বীকারও করে নিয়েছেন।

এদিকে, ম্যাক্রোঁর সেই কৌশলে নাটকীয় মোড় নিয়েছে নির্বাচনের হিসাবে। বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী, দেশটির নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেতে পাচ্ছে বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনপিই)।

উগ্র ডানপন্থী ন্যাশনাল র‌্যালি ছাড়াও পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জোট টুগেদার অ্যালায়েন্সও। অপর দিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাতে প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাম জোটের নেতারা।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দেওয়া বুথফেরত জরিপের তথ্যানুযায়ী, ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে ১৭২ থেকে ২১৫টি আসন পেতে যাচ্ছে বাম জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেতে যাচ্ছে ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থী জোট টুগেদার অ্যালায়েন্স। তারা পেতে পারে ১৫০ থেকে ১৮০টি আসন। আর ১১৫ থেকে ১৫৫টি আসন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকতে পারে ন্যাশনাল র‌্যালি।

ফ্রান্সে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৮৯টি আসন। সেক্ষেত্রে বাম জোটকে সরকার গঠন করতে হলে অন্যদের সমর্থন নিতে হবে, তাতে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনাই বেশি।

এর আগে গত রবিবার অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে সবচেয়ে বেশি ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন)। বর্ণবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষী ইতিহাসের কারণে আরএনকে দীর্ঘ সময় ধরে দূরে সরিয়ে রেখেছিল ফ্রান্সের জনগণের বড় একটি অংশ। তবে সম্প্রতি দলটির সমর্থন বেড়ে যায়। এর পেছনে কাজ করেছে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর প্রতি ভোটারদের ক্ষোভ।

প্রথম দফা ভোটের পর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে আসা ন্যাশনাল র‌্যালিকে নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন ফ্রান্সের উদার ও মধ্যপন্থীরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কট্টর ডানপন্থী কোনও দল দেশটিতে ক্ষমতায় বসতে পারেনি। তাই আরএনকে ঠেকাতে বামপন্থীদের জোট এনপিই ও ম্যাক্রোঁর জোট টুগেদার অ্যালায়েন্সের মধ্যে আপস হয়। আরএনের বিরুদ্ধে পড়া ভোটগুলো যেন একজনই পান, সেজন্য এই দুই জোট মিলে দুই শতাধিক প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে দেন। বাম ও মধ্যপন্থীদের এই কৌশলেই বাজিমাত হয়েছে।

বুথফেরত জরিপের ফল আসার পর বাম জোটের অন্যতম শরিক দল সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা অলিভিয়ের ফাউরে বলেছেন, “ফ্রান্স বলেছে, ন্যাশনাল র‌্যালিকে ক্ষমতা দেওয়া হবে না। এখানে নিউ পপুলার ফ্রন্টের জয় হয়েছে।”

পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন ম্যাক্রোঁর পক্ষের নেতা ও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল। তিনি এরই মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে, ন্যাশনাল র‌্যালির নেতা মারিন লা পেন বলেছেন, তার দলের জয় শুধু বিলম্বিত করা হয়েছে। আজকের এই ফলের মধ্যে তিনি আগামী দিনের বিজয়ের বীজ দেখতে পাচ্ছেন।

ন্যাশনাল র‌্যালি জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী হতেন দলটির নেতা জরদান বারদেলা। বুথফেরত জরিপের ফল আসার পর বাম ও মধ্যপন্থীদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘মর্যাদাহীন’ জোট ফ্রান্সের জনগণকে ‘ন্যাশনাল র‌্যালির বিজয়’ থেকে বঞ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ গত ৯ জুন আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এরপর সোশ্যালিস্ট (সমাজতান্ত্রিক), পরিবেশবাদী, কমিউনিস্ট ও কট্টর বামপন্থী দল ফ্রান্স আনবোয়েড পার্টি (এলএফআই) মিলে নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনপিই) গঠন করে। এই দলগুলো আগে একে অপরের সমালোচনা করত। কেননা, দলগুলোর আদর্শ ও কর্মপদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। তারপরও শুধুমাত্র কট্টর ডানপন্থীদের সরকার গঠনের সুযোগ না দিতেই দলগুলো এই নির্বাচনী জোট গঠন করে। সূত্র: বিবিসি


আরও পড়ুন: