ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ নভেম্বর ২০২৪
২৯ অক্টোবর ২০২৪

নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে বানভাসিরা


ডেস্ক রিপোর্ট
90

প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ১০:০৮:৩৫ এএম
নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে বানভাসিরা ফাইল-ফটো



স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দেশের ১১টি জেলার ৭৭ উপজেলার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন। আর আকস্মিক এই বন্যায় গত চার দিনে দুই নারীসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান গতকাল শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

কুমিল্লাঃ

কুমিল্লা জেলায়ও গতকাল বন্যার মারাত্মক অবনতি হয়। চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা সদর উপজেলা, আদর্শ সদর, ব্রাহ্মণপাড়া, লাকসাম, বুড়িচং, বরুড়া, দেবিদ্বার, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রামের মুরাদনগর ও দাউদকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে নাঙ্গলকোটের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকায় বন্যাকবলিত। গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার ১.১৩ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় একটি অংশ তলিয়ে গেছে।

নোয়াখালীঃ

নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার সবকটিতেই বসতঘর ও সড়ক তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি ২০ লাখ মানুষ। এদের বেশিরভাগই খাবার ও বাসস্থানের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। জেলার সদর, সুবর্ণচর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়।

লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানান ডিসি সুরাইয়া জাহান। জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৮৯টি সাইক্লোন শেল্টারগুলোও প্রস্তুত রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যার পানিতে ৩৬টি গ্রামের ৪৩০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়।

চট্টগ্রামঃ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, মিরসরাই, সীতাকু-, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা। এখানকার ২২ ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। মিরসরাইয়ে ৬০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে গেছে। অন্য দিকে, নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, শুলকবহর, বাদুরতলা, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট, পাঁচলাইশ, হালিশহরসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে পানি ঢুকে যায়।

সিলেটঃ

মৌলভীবাজারে মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি গতকাল বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।

হবিগঞ্জের ৫ উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। জেলার খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ সদর, চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ, মাধবপুর ও নবীগঞ্জ উপজেলায় অন্তত আট হাজার ২৪০টি পরিবার পানিবন্দি। বাহুবল উপজেলার করাঙ্গী তীরবর্তী প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জের লস্করপুরে রেলসেতু হুমকির মুখে পড়ায় গতকাল দুপুর থেকে সিলেটের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কক্সবাজারঃ

কক্সবাজারে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত শতাধিক গ্রামবাসী। বিশেষ করে ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। রেলপথ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কক্সবাজারের পাশর্^বর্তী বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের ৮ গ্রামের চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

খাগড়াছড়িতে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলা সদরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি। দীঘিনালার মেরুং, বোয়ালখালি ও কবাখালি ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

রাঙামাটিঃ

রাঙামাটিতে টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২০টি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে পানি থাকায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাউখালীর ইছামতি খাল ও কাউখালী খালে পানি বেড়ে ডুবে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০টি ঘর। বাঘাইছড়িতে ২০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়।

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সেচ প্রকল্পের ১০০ কিলোমিটার এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ওই পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জে বন্যার আশঙ্কা নেই : বন্যা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা নেই। অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


আরও পড়ুন: