ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ নভেম্বর ২০২৪
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিশ্বের নতুন চমক চিত্রশিল্পী রোবট অ্যাডা


ডেস্ক রিপোর্ট
301

প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৩:০৯:০৬ পিএম
বিশ্বের নতুন চমক চিত্রশিল্পী রোবট অ্যাডা ফাইল-ফটো



বিশ্বে এবারই প্রথম খোঁজ মিলল রোবট চিত্রশিল্পীর। রোবটটি দেখতে অবিকল একজন নারীর মতো। এই নারী রোবটের নাম দেয়া হয়েছে অ্যাডা। বিশ্বের প্রথম এই শিল্পী রোবটের নির্মাতা আডিয়ান মেলার। কম্পিউটিংয়ের অগ্রদূত অ্যাডা লাভলাসের নামানুসারে অ্যাডার নামকরণ করা হয়েছে।

এই রোবট তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এরই মধ্যে চমকে দিয়েছে সবাইকে। মানুষের চোখে চোখ রেখেই ছবি এঁকে দিতে পারে অ্যাডা। যার ছবি আঁকবে, তার সামনে গিয়ে অ্যাডা তার চোখের পলক ফেলে নেয়, আর তখনই অ্যাডা তার সামনে থাকা ব্যক্তির ছবি চোখের মধ্যে ক্যাপচার করে নেয়। তারপর ওই ছবি কম্পিউটিং ভিশন সিস্টেমের মাধ্যমে মনের মতো করে নানান রঙে এঁকে নেয়। অ্যাডা রোবটের মধ্যে শিল্পকর্ম ও সৃজনশীলতার জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম ইনস্টল করা হয়েছে। লন্ডনের ডিজাইন মিউজিয়ামে এরই মধ্যে অ্যাডা তার দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। এই রোবটটি রোবোটিকস ফার্ম ‘ইঞ্জিনিয়ার্ড আর্টস’ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের করা এআই অ্যালগরিদম বিকাশের সহযোগিতার ফল। ২০১৯ সালে এই রোবটের নির্মাণকাজ শেষ  হলেও অ্যাডাকে পরবর্তী দুই বছর ধরে উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা আপডেট করা হয়েছে।

তার প্রথম চিত্রকর্ম তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। লন্ডন ডিজাইন মিউজিয়ামে অ্যাডার চিত্রকর্ম প্রদর্শনী হতেই প্রথম দিনে বিক্রি হয়েছে এক মিলিয়নের বেশি মূল্যের পোর্ট্রেট। এ ছাড়াও ২০২২ সালে ভেনিসে তার একটি একক এক্সিভিশন ছিল।

প্রথম প্রথম অতিপ্রাকৃতিক ছবির চেয়ে বেশি কিছু আঁকতে পারত না অ্যাডা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষণ পেয়ে আজ সে যথেষ্ট পটু। তার ছবি আঁকার হাত এতটাই নিখুঁত যে নিজের ছবিও এঁকেছে সে। অ্যাডা একজন মানুষের সম্পূর্ণ প্রতিকৃতি আঁকতে সময় নেয় মাত্র ৪৫ থেকে ৭৫ মিনিট। শুধু ছবি আঁকা নয়, মূর্তি তৈরি এমনকি কবিতা লেখায়ও দক্ষ হয়ে উঠেছে রোবটটি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাডা বেশ জনপ্রিয়। ইনস্টাগ্রামে তার এক লাখেরও বেশি অনুসারী রয়েছে। তার নতুন নতুন ছবি ইনস্টার হ্যান্ডেলে হরহামেশাই আপলোড করতে দেখা যায়। সম্প্রতি ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রয়াণের দিন রানির একটি সুন্দর ছবি এঁকে শেয়ার করা হয়েছিল অ্যাডা ইনস্টাগ্রামে।

এরই মধ্যে এই হিউম্যানয়েড রোবটের সাফল্য নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি আশঙ্কার মেঘ জমা হয়েছে বহু শিল্পীর মধ্যে। আইডান মেলার জানিয়েছেন, তার সহকর্মীরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। এক দল মনে করছেন, এই আবিষ্কার সত্যিই যুগান্তকারী। অন্য দলের আশঙ্কা, এবার হয়তো শিল্পীদের কাজের পরিসরটাও দখল করে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

তবে অক্সফোর্ড গ্যালারিস্ট ও অ্যাডার নির্মাতা মেলার বলেন,  এই দুই মতই আসলে যথেষ্ট একপাক্ষিক। তার মতে, যখন ক্যামেরা আবিষ্কার হয়েছিল, তখনও কিছু শিল্পী একই অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ ফটোগ্রাফিই শিল্পের এক নতুন মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। আগামী দিনে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে রোবট অনেক কিছুই করবে। আজ হোক বা কাল, শিল্পী রোবটের জন্মও হতো। কিন্তু এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে শিল্পের জগতে ঠিক কতটা পরিবর্তন ঘটতে পারে, সেটাই দেখতে চান রোবর্টের নির্মাতা মেলার। তিনি চান, এই নিয়ে আরও বেশি করে চর্চা হোক। যত যাই হোক, অ্যাডা শেষ পর্যন্ত একটি যন্ত্র মাত্র। তার নিজের কোনো বোধশক্তি নেই। কিন্তু মানুষের বোধশক্তির ওপর নির্ভর করেই সে অসাধ্য সাধন করতে পারে।

আডিয়ানের মতো অনেক বিজ্ঞানী এবং সমাজতত্ত্ববিদ মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতই উন্নতি করুক, তা কোনোদিনই মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে অতিক্রম করতে পারবে না। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সৃজনের ক্ষমতা নেই, যা শুধু রয়েছে মানুষেরই।


আরও পড়ুন: