ঢাকা বৃহস্পতিবার
১৮ এপ্রিল ২০২৪
১৬ মার্চ ২০২৪

একজন ভালো বসের ব্যবহার যেমন হওয়া উচিত


ডেস্ক রিপোর্ট
151

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২২ | ০১:১১:১৭ পিএম
একজন ভালো বসের ব্যবহার যেমন হওয়া উচিত ফাইল-ফটো



ভাব গম্ভীর চাল–চলন। যাকে দেখলেই কর্মীদের শিরদাঁড়া দাঁড়িয়ে যায়। বস যদি ওঠতে বলেন, উঠবেন। বস যদি বলেন বসেন, বসবেন। উনিশ থেকে বিশ হলে বস ধমক দেবেন। বস টার্গেট দেবেন, ডেড লাইন দেবেন। এটাই স্বাভাবিক। বস রাত বারোটায় ফোন দেবেন, এটাও স্বাভাবিক। বস রাগ দেখাবেন, এটা আরও স্বাভাবিক। টার্গেট পূরণ হয়নি, বস ফাইল ছুড়ে মারবেন। আর তাঁর ধমক খেয়ে খেয়ে বেচারা কর্মীদের হৃৎপিণ্ড ধুঁক ধুঁক করে চলে, না চলার মতো। শরীর মন নিস্তেজ হয়। তা দিয়ে আর উৎপাদনের ওপর কতটা ইতিবাচক ফল ফেলতে পারে?

তো ইতিবাচক ফল পড়ুক আর না পড়ুক বা কোথাও ফেলুক আর না ফেলুক, আমরা করপোরেট অফিসাররা জীবনটাকে ঝকঝকে করে রাখি ব্র্যান্ডেড শার্ট–টাই, দামি গাড়ি আর নামীদামি সব কসমেটিকস ভ্যানিটি ব্যাগের ওপর দিয়ে। নিজের অতি প্রিয় ভালোবাসার মানুষটাকেও সহ্য করার মতো সহ্য শক্তি এক সময় কমতনাকি বস এমন হবেন? যিনি কিনা তাঁর কর্মীকে দিন শেষে খুশি খুশি ঘরে পাঠাবেন। নিজেও দিন শেষে সুখী মনে ঘরে ফিরবেন। আজকাল মোটামুটি সব মা–বাবা চাকরি করেন। স্বামী–স্ত্রী দুজন যখন সন্ধ্যায় খুশি মনে ঘরে ঢোকেন, তখন তাঁরা প্রস্তুত করতে পারেন শক্তিশালী পরবর্তী প্রজন্ম। কিন্তু যখন মানসিক চাপ, শারীরিক ক্লান্তি নিয়ে দুজন মানুষ ঘরে ফেরেন, তারা আর সন্তানদের কী দিতে পারেন? খুব স্বাভাবিক কিছু উপদেশ, ধমক–ধামক! দোষ যদি সামান্য হয় তার জন্য বড় ধরনের শাস্তি। আসল কথা, বসের কাছ থেকে পাওয়া সব ফেরত দেবেন পরিবারের বাকি সবাইকে। ছোট বেলা শোনা গল্পের মতো।

বাদশাহের রাগ বিবির ওপর, বিবির রাগ বাঁদির ওপর। বাঁদির রাগ বিড়ালের ওপর। সময় এসেছে এসব থেকে বেরিয়ে আসার। কারণ এখন কেউই আর সে যুগে নেই। ঘরে ঢুকেই বলবেন মেজাজ খারাপ, কেউ কথা বল না। বাচ্চা এসেছিল কথা বলতে, কিন্তু পারেনি। উল্টো বকা খেয়ে চলে গেছে। বেচারা স্কুলেও বিনা কারণে হয়তো শাস্তি পেয়েছিল। সে দুঃখ ভাগ করার মানুষ পেল না। বউ যদি জবরদস্ত হন, তাহলে তো কথা নেই। এ রকম বিধ্বস্ত মানুষ পর দিন একটা কোম্পানিকে কি আর এমন ভালো উৎপাদন দিতে পারেন? বিগড়ানো মেজাজ নিয়ে কাজ করলেও তা সুখকর হয় না। আবার ভুল হওয়াতো স্বাভাবিক।

সে হোক বস বা অধীনস্থ একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখবেন, সব শহরের বড় বড় হাসপাতালে ‘এক্সিকিউটিভ হেলথ চেকআপ’–এর ব্যবস্থা আছে, কিন্তু শ্রমিকদের জন্য নেই। কারণ অসুখ-বিসুখ হয় বসদের বেশি। কেন হয়? ব্যাপারটা একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই সহজে হিসাবটা বেরিয়ে আসে। বসরা শ্রমিকদের হোক আর অধীনস্থ ছোট কর্মচারীদের ডেকে বকাঝকা দিলেন। রেগে রেগে কথা বলেন। দুঃখিত তাঁর হওয়ার কথা। অসুখ তো তাঁদের হওয়ার কথা।

বসের রাগ বসকেই খাচ্ছে। মাস শেষে অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সশিটের মতো অসুখ-বিসুখের ব্যালেন্সশআই এম দ্য বস! আমি কি কর্মীর সঙ্গে বন্ধুর মতো হতে পারি? কেন সে আমাকে দেখে সালাম দেবে? গুড মর্নিং দেবে? আমি কি আগে থেকে বলতে পারি না আদাব, সালাম, গুড মর্নিং? অফিসে ঢুকতেই জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কেমন আছ? আমি যদি কর্মীদের নিয়ে একটুখানি ভাবি! একটু খানি ভালো ছোঁয়া দিতে পারি, হয়তো তাঁদের মানসিকতা বদলাতে পারি অন্যভাবে। একজন মানুষ যখন সুখ–দুঃখ যে অনুসারেই ধাবিত হয়, তাঁর কর্মের গতিধারাও সে দিকে ধাবিত হয়। সফলতা যেমন নিশ্চিত, নিচে নেমে যাওয়াও নিশ্চিত। যাদের হাত ধরে একটা প্রতিষ্ঠান ওপরে উঠছে, সে হাতগুলো আদৌ ভালো আছে কিনা? এটা কয়জন মালিক, ম্যানেজার বা বস খোঁজ করেন? কর্মীকে চাপে রাখা, কঠিন সময় দেওয়া—এটি কিন্তু অনেককর্মীর ছোট ছোট ভুলের জন্য যখন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়, তখন তার মানসিক শক্তির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক শক্তিও নেমে যায়। বস যদি ভাবেন, ‘তাঁর মেধা আমার সমান হলে তো সে আমার চেয়ারে বসতে পারত।’ এই চিন্তার সময়টুকুই আপনাকে রাগ সংবরণ করতে সাহায্য করবে। পরিস্থিতি পরিস্থিতির জায়গায়। আপনার মেজাজ মেজাজের জায়গায়। অন্যের ভুলের জন্য কেন নিজের রক্তচাপ বাড়াবেন? একজন কর্মী যখন ভুল করে, স্বাভাবিকভাবে তার মানসিক অবস্থা একটু নিচে থাকে। আর ঠিক তখনই তাকে ধমক দিলে সে আরও নিচে নেমে যায়।

কম শক্তিযুক্তকর্মী কীভাবে ভালো কর্মী ভুল করার পর একদিন কোনো বস শুধু এটি বলেন, ‘আচ্ছা কোনো সমস্যা না, ঠিক আছে।’ একটি সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করে বলেন, ‘পরবর্তীতে খেয়াল রেখো।’ আপনি নিশ্চিত ধরে রাখেন, দ্বিতীয়বার সে ভুল করবে না। এটা পরীক্ষিত সত্য। বিশ্বাস না হলে একবার অফিসের কৌশলটা বদলে দেখতে পারেন। যার শক্তি নেই, তাকে শক্তি দিতে হয়। হাত ধরে ওপরে তুলতে হয়। সে যখন কাজটি করবে, তার মনে থাকবে আপনার দেওয়া শক্তিটুকুর কথা।

ধমক–রাগ দিয়ে তাকে নিচে নামালে, সে কখনোই ভালো উৎপাদন দিতে পারবে না। কারণ সে তখন কাজ করে ভয় নিয়ে। কি জানি, ভুল করি কি না! ভয় থেকে ভুল নিশ্চিত হয়ে পড়ে। আরেকটা বিষয়। অফিসের যত রকম সমস্যা, তা একটা সময়ের ছকে বেঁধে দেওয়া ভালো। অন্তত রাত আটটার পর কর্মীদের ইমেইল বা নির্দেশ পাঠানো বন্ধ রাখুন। যদি তা রাতের শিফট সংক্রান্ত না হয়। কর্মের প্রভাব সাংসারিক জীবন অনেক ক্ষেত্রেবস যদি কাজের চাপ বলে বলে নিজে ক্লান্ত হন আর বাকিদেরও চাপে রাখেন, চাপ কমবে না বরং বাড়বে। যা বলা হয়, তার ষোলো আনা প্রভাব পড়ে দেহ ও মনে। পরিবেশটা তখন সেভাবেই তৈরি হয়।

আমাদের শক্তির মাত্রা সে অনুযায়ীই উৎপাদন করে। আজকের পৃথিবীটা আমরাই তৈরি করেছি। সুতরাং এটা বদলাবও আমরা। আজকাল চাপ শব্দের মানে হচ্ছে সফলতা। যাকে আমরা যত বেশি চাপে দেখি, তাকে তত বেশি সফলl ভাবি। তাঁর জীবনে কী চলছে, সেটা নিয়ে কে ভাবে? আমাদের চোখে সে চাপে আছে তার মানে সে সফল। আর কাউকে যদি দেখি, রিলাক্স মুডে চলছে! তাঁকে নিয়ে আমাদের ভাবনা অনেক সময় গোপনও করতে পারি না! বলেই ফেলি, আরে তোমার প্র্যাকটিস কি ঠিকমতো চলছে না! তোমার কি আর এখন চাকরি নেই? বলতে না পারলে মনে মনে হলেও বলি, ‘এর তো মনে হয় রোজগার নেই’! কেউ এত স্বাচ্ছন্দ্য মনে চলে কীভাবে? রিলাক্স হাসিখুশি থেকেও কি সফল হওয়া যায়? যায়। খুশি থাকলে উৎপাদন কয়েকগ১৪ বছর দেশে করপোরেট অফিসে কাজ করেছি।

জীবনের প্রথম চাকরিতে অত্যন্ত ভালো একটি অফিস পেয়েছিলাম এবং সেই সঙ্গে বস, ডিরেক্টর, সহকর্মী। সব যে ঠিক ছিল, তা নয়। অনেক সময় মাথা নিচু করে চলে যেতাম সিনিয়রদের সামনে দিয়ে লাজুক ভাব নিয়ে। কেউ কেউ সালাম না করার অপরাধে লজ্জাও দিয়েছেন। তবে সবাই নয়। কিন্তু একই পরিবারের মানুষের মতো ছিলাম আমরা। সে হোক বস, হোক সমপর্যায়ের কর্মী। একটা সময় সেই একই কোম্পানি বদলে গিয়ে শুরু হলো একেবারে সামরিক নিয়মনীতি। নতুন করে শিখলাম, বস মানে অনেক বড় কিছু!


আরও পড়ুন: