ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ নভেম্বর ২০২৪
২৯ অক্টোবর ২০২৪

কিডনি দাতা সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্যের মৃত্যু ঐশ্বর্যময়


ডেস্ক রিপোর্ট
255

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ | ০৪:০১:৫২ পিএম
কিডনি দাতা সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্যের মৃত্যু ঐশ্বর্যময় ফাইল-ফটো



সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্যের মৃত্যু নিঃসন্দেহে গৌরবময়। মৃত্যু যন্ত্রণার। সাধারণ চোখে তাঁর মৃত্যু আরও বেশি যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু নিজের নামের সাথে সমার্থক করে সেই মৃত্যুকে করে গেলেন ঐশ্বর্যময় আর অনুপ্রেরণাদায়ক।

আমাদের সারাহ মৃত্যুর সময় দুটি কর্নিয়া ও দুইটি কিডনি দান করে গেছেন। তাঁর দুটি কর্নিয়া দুজন ব্যক্তির চোখের আলো ফিরিয়ে দিয়েছে। দুইটি কিডনি দুজনের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। দু'জনই নারী। দেশে প্রথমবারের মতো মৃত ব্যক্তির দান করা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হলো অন্য ব্যক্তির দেহে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিডনি ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকেরা এই প্রতিস্থাপন করেন। ভারতে সাত-আট বছর আগ থেকেই এ কাজ শুরু হয়। সারাহ-র এই ইতিহাস সৃষ্টি করা মহান কাজ অন্যকে কিডনি দানে উৎসাহিত করবে। আর আমরা পেয়ে গেলাম মৃত্যুকে জয় করে নেওয়া একজন সাহসিনীকে।

মাত্র বিশ বছর বয়সে জীবনপথের যাত্রা থেমে গেল সারাহ ইসলামের। সদ্য কিশোরী থেকে তরুণী হয়ে ওঠা মেয়েটি আর নেই। ফুলের মতো উচ্ছল মেয়েটি আজ খসে পড়া নক্ষত্র। যে যন্ত্রণাদায়ক রোগ তিনি দীর্ঘদিন ধরে বহন করে আসছিলেন, সেখানেই মৃত্যুই ছিল যেন তাঁর শেষ গন্তব্য। এ ছাড়া তাঁর কোনো পথ না থাকলেও, কাজ কিন্তু ঠিকই ছিল আর সেটি তিনি দেখিয়ে গেছেন। করেও গেছেন। সারাহ ইসলামের ছোট্ট এ জীবন জীর্ণ ছিল না। ছিন্ন মলিন বেশে নয়, তাঁর এ প্রস্থান ছিল উজ্জ্বল।

দেশে প্রথম এ ধরনের অস্ত্রোপচার উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানা বলেন, "সারাহ সত্যি সত্যি স্বর্গীয় সন্তান ছিল। যেখানে যেত, ব্যবহার দিয়ে সবাইকে মোহিত করে রাখত।"

তিনি আরো বলেন যে "ও (সারাহ) বলেছিল আমার সবকিছু গবেষণার জন্য দিয়ে দিতে পারো মা।’’ সারাহর ইচ্ছা ছিল, "ওর ব্রেন নিয়ে গবেষণা হোক।"

সারাহ ইসলামের স্নিগ্ধ মুখাবয়বটি বারবার চোখের সামনে ভেসে আসছে। গত কয়েকদিন ধরে তিনি ক্লিনিক্যালি ডেথ ছিলেন। অনেক তাঁর ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু পরিবারের ও বন্ধুবান্ধবের সেই আশাকে উপেক্ষা করে চলে গেলেন তিনি। অন্যদিকে চার ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দিলেন জীবনের আশা। ভবিষ্যতের আরও অসংখ্য মানুষের জন্য জ্বালিয়ে গেলেন আশার প্রদীপ।

অল্প বয়সে দুরারোগ্য টিউবেরাস স্ক্লেরোসিস রোগে আক্রান্ত হন সারাহ। এ রোগ নিয়েই ছোট্ট কিন্তু সুন্দর একটি জীবন কাটিয়ে দিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। জড়িত ছিলেন সামাজিক কাজে। শিশু-কিশোরদের পত্রিকা কিশোর আলোর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। সুন্দর ছবি আঁকতেন। তাঁর ফেসবুক আইডিতে ঢুকলে তাঁর আঁকা ছবি আর কার্টুন দেখে মুগ্ধ হতে হয়।

সারাহ যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তাকে নিয়ে তার মা শবনম সুলতানা ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেটিতে তিনি লিখেছিলেন যে, সারাহ ছিল এক অকুতোভয় মেয়ে, যে কিনা বরাবরই রক্ত শূন্যতায় ভুগত ... তারপরেও যে কিনা কারো জরুরি রক্তদানের প্রয়োজনে ছুটে চলে যেত  রক্তের সন্ধানে.. ক্লাসে কারো বমি হলে  সবার আগে সেই ছুটে যেত,...  স্কুলের টয়লেটে পড়ে থাকা আরেক মেয়ের রহস্যজনক মৃত্যুতে প্রতিবাদ করত  সবার আগে...এ দেশে নারীরা যাতে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেন নিরাপদে পথ চলতে পারে, সেই দাবিতে আন্দোলন  করত!

সত্যিই তো, এমন মেয়ে না হলে কি মৃত্যুতেও এ কাজ করে যাওয়া সম্ভব! কবিতার বাইরেও মৃত্যু কি কখনো এত সুন্দর হতে পারে? সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য আপনাকে স্যালুট। বাংলাদেশ আপনাকে মনে রাখবে।


আরও পড়ুন: