ঢাকা শনিবার
২০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পত্তির জেরে মাকে পাঁচ টুকরো করে হত্যা: ছেলেসহ ৭ জনের ফাঁসি


ডেস্ক রিপোর্ট
165

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ | ০২:০১:১৫ পিএম
সম্পত্তির জেরে মাকে পাঁচ টুকরো করে হত্যা: ছেলেসহ ৭ জনের ফাঁসি ফাইল-ফটো



নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নুর জাহান বেগম নামে এক নারীকে পাঁচ টুকরা করে হত্যার দায়ে ছেলে হুমায়ুন কবিরসহ ৭ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে এ রায় দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফার সুলতানা। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির হুমু, নিরব, নুর ইসলাম, কালাম, সুমন, হামিদ ও ইসমাইল।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গুলজার আহমেদ জুয়েল।

তিনি বলেন, এ হত্যার ঘটনায় প্রথমে নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির হুমা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশি তদন্তে হত্যার সঙ্গে সরাসরি সন্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি ওঠে আসে। একইসঙ্গে তার সাত সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ পায় পুলিশ।

তিনি আরো বলেন, এ মামলায় ২৭ জনের সাক্ষী সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। একইসঙ্গে নিহতের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল ও ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়। মা যে সন্তানকে জন্ম দিলেন সেই সন্তানই পাঁচ টুকরো করল, এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। আশা করি উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সহযোগীদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মা নুর জাহান বেগমকে হত্যা করেন ছেলে হুমায়ুন কবির হুমু। নুর জাহানের দুই সংসারের দুই ছেলে ছিল। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মাকে জিম্মায় রেখে কয়েকজনের কাছ থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নেয় সুদের ভিত্তিতে। ঐ ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যান। এরপর ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ দেন। বিষয়টি তার মাকে অবহিত করেন হুমায়ুন। এ সময় তার মা ১৩ শতক জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করতে বলেন। কিন্তু হুমায়ুন জানান তার মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা হোক। এতে তার মায়ের অসম্মতি ছিল।

অন্যদিকে নুর জাহান তার ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল। পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য তার ভাইকে চাপ দেন নুর জাহান। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এছাড়া তার প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদেরও বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। এজন্য তারাও হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন।

জবানবন্দিতে হুমায়ুন জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে দুই শতাংশ হামিদকে ও বাকি আট শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। তারপর মায়ের জমি সমান পাঁচ ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রতিশ্রুতিতে তারা ঐ বছরের ৬ অক্টোবর বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের ওপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। পরে তারা ঐদিন রাতে নুর জাহানকে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন। এরপর পাঁচ খণ্ড করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে তা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন তারা।


আরও পড়ুন: