ঢাকা মঙ্গলবার
০৫ নভেম্বর ২০২৪
৩০ অক্টোবর ২০২৪

স্পেনের রাজা-প্রধানমন্ত্রীকে কাদা ছুড়লেন ক্ষুব্ধ জনতা


ডেস্ক রিপোর্ট
5

প্রকাশিত: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১১:১১:৩১ এএম
স্পেনের রাজা-প্রধানমন্ত্রীকে কাদা ছুড়লেন ক্ষুব্ধ জনতা ফাইল-ফটো



পাঁচ দশকের মধ্যে ভয়াবহ বন্যার কবলে ইউরোপের দেশ স্পেন। বিশেষ করে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে ভয়াবহ বন্যায় দেশটিতে মারা গেছেন ২১৭ জন এবং আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।এমন পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুব্ধ মানুষের রোষানলে পড়েছেন স্পেনের রাজা, রানি ও প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের গায়ে কাদা ছুড়ে মেরেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশের পাইপোর্তা শহরে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এ পরিস্থিতির শিকান হন তারা। খবর বিবিসি।

স্থানীয় সময় গতকাল রোববার পাইপোর্তা শহরে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভ্যালেন্সিয়ার আঞ্চলিক প্রধান কার্লোস মেজন।এলাকা পরিদর্শনের সময় বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলের কবলে পড়েন প্রধানমন্ত্রী ও আঞ্চলিক প্রধান। ক্ষুব্ধ জনতা কাদা ছুড়লে সেটা তাঁদের গায়ে লাগে। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত দুজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নেন।

একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ ও রানি লেতিজিয়াকেও। জনতার ছোড়া কাদা রাজা–রানির মুখে ও কাপড়ে লাগে। তবে মুখে এবং কাপড়ে কাদা নিয়েই ভীরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন রাজা ফেলিপ এবং রানী লেতিজিয়া।এ সময় রাজাকে বেশ কয়েকজনকে সান্ত্বনা দিতে দেখা যায়, এমনকি তাদেরকে আলিঙ্গনও করতে দেখা যায়। যদিও ঘটনার পরপরই তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নেন নিরাপত্তাকর্মীরা।

বিবিসি বলছে, বন্যার আগে থেকে সরকারের সতর্কতার অভাব, বন্যার পর উদ্ধারকাজে ধীরগতির এবং কর্তৃপক্ষের অপর্যাপ্ত সহায়তার জন্য বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ভ্যালেন্সিয়ার মানুষ। যার কারণে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সফরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন তারা।এমনকি রাজা, রানি ও প্রধানমন্ত্রীর সামনে ‘হত্যাকারী’ এবং ‘লজ্জা’ বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ করেছেন অনেকে।

স্প্যানিশ মিডিয়া জানিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজকে লক্ষ্য করে বস্তু নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এমনকি তিনি গাড়িতে করে চলে যাওয়ার সময় তার গাড়িতে পাথর নিক্ষেপ করা হয়।এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বন্যায় মানুষ এখনও মারা যাচ্ছে, কিন্তু নেতারা তাদের জন্য কিছুই করেন না। এক নারী বলেন: “তারা আমাদেরকে মরতে রেখে গেছে। আমরা সবকিছু হারিয়েছি, আমাদের ব্যবসা, আমাদের বাড়ি, আমাদের স্বপ্ন।"এ সময় সিভিল গার্ড এবং মাউন্ট অফিসারদের বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। পরে স্পেনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ভ্যালেন্সিয়া সফর স্থগিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবারের প্রবল বৃষ্টিপাতে স্পেনের পূর্বাঞ্চল ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশ ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। বন্যার তোড়ে ভেসে যায় বিভিন্ন সেতু, সড়ক ও ভবন। পানির তোড় থেকে বাঁচতে অনেক মানুষকে বাড়ির ছাদে উঠতে বা গাছ আঁকড়ে ধরতে দেখা যায়। ঘন কাদায় ঢেকে যায় অনেক এলাকা।

ইউরোপের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী বন্যা বলে জানিয়েছে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।বিবিসি জানিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৭ জনে। আরও অনেক নিখোঁজ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া মৃত্যুর প্রায় সবই ভূমধ্যসাগরের উপকূলে ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে হয়েছে।স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা এইমেত, রবিবার দক্ষিণ ভ্যালেন্সিয়ার কিছু অংশে- আলজিরা, কুলেরা এবং গান্ডিয়া শহরসহ আশেপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা জারি করেছে।


আরও পড়ুন: